পৃথিবীর দিন-রাত্রের হ্রাস বৃদ্ধির কারণ কি ?
উঃ) কেবলমাত্র নিরক্ষরেখা বরাবর অঞ্চল বাদে পৃথিবীর সর্বত্র সারা বছর ধরেই দিন-রাতের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। যেমন,
একুশে মার্চ
সূর্যকে পরিক্রমণ করতে করতে পৃথিবী প্রতিবছর নিজ কক্ষের এমন স্থানে এসে পৌঁছয় যে সেদিন,
ক) মধ্যাহ্ন সূর্য রশ্মি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পতিত হয়।
খ) উত্তর ও দক্ষিণ উভয় মেরু একইসঙ্গে সূর্যালোক পায়।
গ) ছায়াবৃত্ত প্রতিটি সমাক্ষ রেখাকে সমান দুইটি ভাগে ভাগ করে।
এই একুশে মার্চ তারিখে পৃথিবীর সকল স্থানে ও সকল নিরক্ষরেখায় বারো ঘন্টা দিন এবং 12 ঘন্টা রাত্রি হয়। এই দিনটিকে মহাবিশুবো বলা হয়। অবশ্য এই তারিখে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে 24 ঘন্টায় সূর্য এর আলো লক্ষ্য করা যায় তবে এই দিন উভয় মেরু থেকেই সূর্যকে 24 ঘন্টায় দিগন্ত রেখা বরাবর দেখা যায় এই দিনকে উত্তর মেরু অঞ্চলের প্রভাত এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের সন্ধ্যা বলতে পারি।
মহাবিষুব অর্থাৎ যেদিন মধ্যাহ্ন সূর্য রশ্মি লম্বভাবে নিরক্ষরেখার উপর পড়ে সেদিন সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়।
এই তারিখে প্রতি নিরক্ষরেখায় সূর্য ঠিক পূর্ব দিকে ওঠে এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায় এবং প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময় অনুযায়ী সূর্য ঠিক সকাল ছটায় ওঠে ও সন্ধ্যা ছটায় অস্ত যায়।
একুশে মার্চের পর থেকে পৃথিবী তার কক্ষে যতই এগোতে থাকে সূর্য রশ্মি ততই নিরক্ষরেখার উত্তর দিকে লম্বভাবে পড়তে থাকে এর ফলে উত্তর গোলার্ধে প্রতিদিন একটু একটু করে দিবা ভাগ 12 ঘন্টা অপেক্ষা বড় হতে থাকে এবং রাত ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা ছোট হতে থাকে। এবং অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে এর বিপরীত অর্থাৎ রাত্রি কাল 12 ঘন্টা অপেক্ষা বড় হতে থাকে এবং দিবা ভাগ 12 ঘন্টা অপেক্ষা ছোট হতে থাকে।
একুশে মার্চ তারিখে উত্তর মেরুতে 24 ঘন্টার দিপা ভাগ হয় কিন্তু একুশে মার্চের পর থেকে ৮৯° ৮৮ ডিগ্রি ৮৭ ডিগ্রী ৮৬° প্রভৃতি উত্তর সম্মুখগুলিও পরপর ক্রমশ একইভাবে আলোক বৃত্তের মধ্যে আসতে থাকে এবং আলোক বৃত্তের মধ্যেই আবর্তন করতে থাকে।
তার ফলে তার ফলে উত্তর গোলার্ধের এই সমাক্ষরেখা গুলিতে ২৪ ঘন্টায় দিবা ভাগ হতে থাকে এই সময় থেকে সূর্যকে উত্তর মেরু অঞ্চলে দিগন্ত রেখা থেকে ক্রমশ উপর দিকে উঠতে দেখা যায়। যেন মনে হয় বেলা বাড়ছে।
দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে কিন্তু এই সময়ে এর বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ একুশে মার্চ তারিখে উত্তর মেরুর মত দক্ষিণ মেরুতেও ২৪ ঘন্টায় দীপা ভাগ থাকে কিন্তু একুশে মার্চের পরপর থেকে ৮৯° ২৭ ডিগ্রি ৮৬ ডিগ্রী প্রভৃতি দক্ষিণগুলিতে ক্রমশ ২৪ ঘন্টায় রাত হতে থাকে এই সময় থেকে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে সূর্য দিগন্ত রেখার নিচে নামতে থাকে যেন মনে হয় সন্ধ্যার পর মধ্যরাত্রি আসছে।
একুশে জুন
একুশে মার্চের পর থেকে এগোতে এগোতে একুশে জুন তারিখে পৃথিবী নিজ কক্ষে এমন স্থানে এসে পৌঁছয় যে সেদিন সূর্য রশ্মি কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় এই দিনটিকে কর্কট সংক্রান্তি বলা হয় এই তারিখে উত্তর গোলার্ধে সর্বত্র দিবা ভাগ সব থেকে বড় হয় এও রাত সব থেকে ছোট হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সব থেকে ছোট হয় এবং রাত্রিভাগ সবথেকে বড় হয় ।
এই তারিখে ছায়াবৃত্ত সুমেরু বৃত্ত ও কুমেরুবৃত্তকে একইসঙ্গে এমনভাবে স্পর্শ করে অবস্থান করে যে সুমেরু থেকে সুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সমগ্র অঞ্চল ২৪ ঘন্টা আলোক বৃত্তের মধ্যে এবং কুমেরু থেকে কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত অঞ্চল অন্ধকার বৃত্তের মধ্যে আবর্তন করে। ফলে এই তারিখে সুমেরু থেকে সুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত সর্বত্র 24 ঘন্টায় দিবা ভাগ থাকে এবং কুমেরু থেকে কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত অঞ্চল ২৪ ঘন্টায় রাত্রি থাকে।
কর্কট সংক্রান্তির দিনটিকে উত্তর মেরু অঞ্চলের দ্বিপ্রহর এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে মধ্যরাত্রি বলা হয়। এই দিন মধ্যাহ্নে সূর্যকে উত্তর মেরুতে সাড়ে ৩০ ডিগ্রি এবং বৃত্তে জিরো ডিগ্রী উন্নতিতে দেখা যায়।
কর্কট সংক্রান্তির দিনটি হল সূর্যের উত্তর অয়নান্ত দিবস । কর্কটক্রান্তি রেখার উত্তর দিকে সূর্য রশ্মি কখনো লম্বভাবে পড়ে না ফলে কর্কটক্রান্তি রেখার উত্তর দিকে সূর্যকে কখনো মাথার উপর দেখা যায় না তাই কর্কটক্রান্তি রেখাতে সূর্য লম্বা হবে কিরণ দেয়ার পর থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয় অর্থাৎ আবার ক্রমশ নিরক্ষরেখার দিকে লম্বভাবে পড়তে থাকে এর ফলে একুশে জুনের পর থেকে দিনের সময় উত্তর গোলার্ধে একটু একটু করে কমতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে একটু একটু করে বাড়তে থাকে।
একুশে জুনের পর থেকে সুমেরুবৃত্ত থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত সাড়ে ৬৬ ডিগ্রি, ডিগ্রি ৬৭ ডিগ্রি, ৬৮ ডিগ্রী এবং ৬৯ ডিগ্রী প্রভৃতি সমাক্ষরেখাগুলি আলোক বৃত্ত থেকে একটু একটু করে অন্ধকার বৃত্তের মধ্যে আসতে থাকে।
ফলে উত্তর গোলার্ধের এই সমাক্ষরেখা গুলিতে ২৪ ঘন্টার দিন একটু একটু করে কমতে থাকে এবং অন্যদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরু বৃত্ত থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত সমাক্ষরেখা গুলি অন্ধকার বৃত্ত থেকে একটু একটু করে আলোক বৃত্তের মধ্যে আসতে থাকে। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধের এই সমাক্ষরেখা গুলিতে ২৪ ঘন্টার রাত্রি গান একটু একটু করে কমতে থাকে এবং তিন শুরু হতে থাকে।
তেইশে সেপ্টেম্বর
তেইশে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী নিজ কক্ষে এমন স্থানে এসে পৌঁছায় যে সেদিন দুপুরে সূর্য রশ্মি একুশে মার্চ তারিখের মত আবার নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পতিত হয় এবং পৃথিবীর সর্বত্র আবার দিনরাত সমান হয়। সূর্য ঠিক পূর্ব দিকে উদিত হয় ও ঠিক পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। এই দিনটিকে বলা হয় জলবিষুব।
একুশে মার্চের মতো তেইশে সেপ্টেম্বর তারিখ ও উভয় মেরুতে 24 ঘন্টা সূর্য দেখা যায় তবে এই দিনটিকে আমরা উত্তরে মেরু অঞ্চলের সন্ধ্যা এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের প্রভাত বলে থাকি।
২৩ শে সেপ্টেম্বর এর পর থেকে দুপুরে সূর্য রশ্মি ক্রমশ নিরক্ষরেখা থেকে দক্ষিণ দিকে লম্বভাবে পড়তে থাকে ফলে এই সময় থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে উত্তর গোলার্ধে দিন ১২ ঘণ্টার কম এবং রাত ১২ ঘণ্টার বেশি হতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে রাত 12 ঘণ্টার কম এবং দিন ১২ ঘণ্টার বেশি হতে থাকে।
এই সময় থেকে উত্তর মেরু অঞ্চলের সমাগ রেখা গুলি ক্রমশ অন্ধকার বৃত্তের মধ্যে এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের সমাক্ষরেখা গুলি ক্রমশ আলোক বৃত্তের মধ্যে আসতে থাকে। যেন উত্তর মেরু অঞ্চলে সন্ধ্যার পর মধ্যরাত্রি ঘুমিয়ে আসছে এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে প্রভাতের পর দুপুর হতে চলেছে।
বাইশে ডিসেম্বর
২৩ শে সেপ্টেম্বর এর পর থেকে এগোতে এগোতে বাইশে ডিসেম্বর তারিখে পৃথিবী নিজ পক্ষের এমন স্থানে এসে পৌঁছায় যে সেদিন মধ্যাহ্ন সূর্য রশ্মি মকর ক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে পড়ে তাই এই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। এই তারিখে একুশে জুন তারিখের ঠিক বিপরীত অবস্থানে দেখা যায় অর্থাৎ এই দিন দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিন এর সময় বড় এবং রাত সবথেকে ছোট হতে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে সর্বত্রর রাত বড় হয় ও দিন ছোট হয়।
মকর সংক্রান্তির দিন উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে কর্কট সংক্রান্তি দিনের বিপরীত অবস্থা হয় এই দিন উত্তর মেরু থেকে সুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল ২৪ ঘন্টা অন্ধকার বৃত্তের মধ্যে এবং দক্ষিণ মেরু থেকে কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল আলোক বৃত্তে মধ্যে অবস্থান করে এই দিনটিকে উত্তর মেরু অঞ্চলের মধ্যরাত্রি ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের দ্বি-প্রহর বলা হয়। এই দিন দুপুরে সূর্যকে সুমেরুবৃত্তে জিরো ডিগ্রি এবং দক্ষিণ মেরুতে সাড়ে ২৩ ডিগ্রী উন্নতিতে দেখা যায়।
মকর সংক্রান্তির দিন দক্ষিণ মেরুতে সূর্যকে সারাটা দিন দিগন্ত থেকে সাড়ে ৩০ ডিগ্রি উপরে দেখা যায়। কিন্তু উত্তর মেরুতে সূর্য দিগন্ত থেকে 24 ঘন্টায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রির নিচে থাকে কর্কট সংক্রান্তির দিন উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়।
মকরসংক্রান্তির দিনটি হল সূর্যের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস। মকরক্রান্তিরেখার দক্ষিণ দিকে সূর্যরশ্মি কখনও লম্বভাবে পড়ে না। ফলে মকরক্রান্তিরেখার দক্ষিণদিকেও সূর্যকে কখনও মাথার উপর দেখা যায় না। মকরক্রান্তিরেখাতে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার পর থেকে সূর্যরশ্মি আবার ক্রমশ নিরক্ষরেখার দিকে লম্বভাবে পড়তে থাকে। ফলে 22 ডিসেম্বরের পর থেকেই দিবাভাগ দক্ষিণ গোলার্ধে একটু একটু করে ছোটো হতে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে একটু একটু করে বড়ো হতে থাকে। অবশেষে পৃথিবী নিজ কে আবার 21 মার্চের অবস্থায় ফিরে আসে এবং দিবারাত্রির দৈর্ঘ্য আবার সমান হয়ে যায়
এরপর সুমেরুবৃত্ত থেকে উত্তর মেরুর দিকের সমাক্ষরেখাগুলি ক্রমশ আলোকবৃত্তের মধে এবং কুমেরুবৃত্ত থেকে দক্ষিণ মেরুরদিকের সমাক্ষরেখাগুলি ক্রমশ অন্ধকার বৃত্তের মধ্যে আসতে থাকে, যেমন উত্তর মেরু অঞ্চলে মধ্যরাত্রি পার হয়ে প্রভাতের দিকে এগোচ্ছে এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে দ্বিপ্রহর পার হয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে।
নিরক্ষরেখায় দিবারাত্রির দৈর্ঘ্য সারা বছরই সমান
পরিক্রমণ গতির ফলে উভয় গোলার্ধে প্রতিদিন বিপরীত পর্যায়ে দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। তবে নিরক্ষরেখায় সারা বছরই 12 ঘণ্টার দিন ও 12 ঘণ্টার রাত হয়। কারণ গোলকাকৃতি পৃথিবীর কেন্দ্র ছায়াবৃত্তেরও কেন্দ্র এবং ছায়াবৃত্তটি যখন সেভাবেই থাকুক না কেন নিরক্ষরেখাকে সারা বছরই দুটি সমস ভাগে ভাগ করে। ফলে নিরক্ষরেখায় সারা বছরই দিবারাত্রির দৈর্ঘ্য সমান থাকে, কখনও হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে না।
FAQ (Frequently asked questions)
কোথায় সূর্য রশ্মি লম্বভাবে সারা বছর কিরণ নেয়?
নিরক্ষরেখার উপর সারা বছর সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়।
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন ও রাতে দৈর্ঘ্য সমান হয় কোন সময়?
একুশে মার্চ এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিনো রাতে দৈর্ঘ্য সমান হয়।
কোন সময় উত্তর গোলার্ধের দিন বড় হয় এবং রাত ছোট হয়?
একুশে জুন উত্তর গোলার্ধে দিন বড় হয় এবং রাত ছোট হয়।
মকর ক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় সূর্যের কোন সময়?
বাইশে ডিসেম্বর।
নিরক্ষরেখার মান কত?
0 ডিগ্ৰি।
কর্কটক্রান্তি রেখার মান কত?
সাড়ে 23 ডিগ্রি উত্তর।
ভারতের উপর দিয়ে কোন রেখার অনুমান করা হয়?
কর্কটক্রান্তি রেখার।
উত্তর গোলার্ধে দিন বড় হতে শুরু হয় কোন সময় থেকে?
বাইশে ডিসেম্বর এর পর থেকে।
পৃথিবী সূর্যের সঙ্গে কত ডিগ্রি কোণে হেলে অবস্থান করে?
সাড়ে 66 ডিগ্রি কোন করে হেলে অবস্থান করে।