ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি
ভূমিকা
ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে চিনের পরেই ভারতের স্থান। ভারতে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ভারতকে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। দেশের খাদ্য ও ভোগাসামগ্রীর উৎপাদনের সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমানুপাত রক্ষিত না হলে দেশের অর্থনীতির পক্ষে তা শুধু দুশ্চিন্তার কারণই নয়, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সমূহ বিপর্যয়। ভারত এখন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জপৃষ্ঠ এবং সমস্যা দীর্ণ।
এর ভয়াবহ পরিণতির কথা চিন্তা করে এখন থেকে প্রতিকারের জন্যে শুধু ভাবনাচিন্তা-
পরিকল্পনা নয়, আন্তরিকভাবে তা বাস্তবায়িত করার প্রয়াসপ্রচেষ্টা চালানো অত্যন্ত জরুরি।
ভারতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পরিসংখ্যা
স্বাধীনতা লাভের পর বিগত চল্লিশ বছরে ভারতে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রা ৪৯ কোটি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৬ কোটি ১১ লক্ষ, ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে এসে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮৪ কোটি ৪০ লক্ষ, তাও জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যা বাদে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মোট জনসংখ্যা ১০০ কোটি অতিক্রম
করেছে। গত এক দশকে অর্থাৎ ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লোকসংখ্যা বেড়েছে ১৬ কোটি। তবে ১৯৭১ ও ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে যেখানে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ২৪.৬৬ শতাংশ, সেখানে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়ে হয়েছিল ২৩-৫ শতাংশ। পরবর্তী দশকে অর্থাৎ ২০১১ খ্রিস্টাব্দের লোকগণনা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও কমে ১৭-৬৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১ কোটির অধিক। ভারতের লোকসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৭.৫ শতাংশ। সাক্ষরতার হার শতাংশ হিসাবে ভারতে ৭৪-০৪। পুরুষ সাক্ষরের হার ৮২.১৪ শতাংশ এবং মহিলা সাক্ষরের হার ৬৫.৪৬ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে গত দশ বছরে লোকসংখ্যা বেড়েছে ১৩.৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ১৩.১৭ শতাংশ ও মহিলা ১৪-৭৫ শতাংশ। এই রাজ্যে সাক্ষরতার হার পুরুষ ৮২.৬৭ ও মহিলা ৭১.১৬ শতাংশ। ভারতে প্রতি বর্গকিমিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৩৮২ জন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
উপরের পরিসংখ্যান থেকে ভারতে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চিত্রটি খুবই ও পরিষ্কার। প্রশ্ন হল দ্রুত হারে এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণ কী। এক দেশে দারিদ্রা ও অশিক্ষা সবচেয়ে বড়ো অভিশাপ। এগুলি যে-কোনো প্রগতিশীল উন্নয়নধারী । কাজের পরিপন্থী। দুই স্বীকার করতে হবে কয়েক ধরে পর পর কয়েকটি পণ্যবার্ষিকী পরিকল্পনা রূপায়ণের
ভারতীয় জীবনযাত্রার মানকে কিছুটা উন্নত করেছে। ফলে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ও সচেতন মৃত্যুর হারকে কমিয়েছে। তিন । বিগত কয়েক দশকে জীবনদায়ী ওষুধের আবিষ্কার ব্যবহার ও সেইসঙ্গে চিকিৎসাদির উন্নত বাকথা মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসে সহায়ক হয়েছে। চার আগে শিশুমৃত্যুর হার ছিল অস্বাভাবিকরকম বেশি, এখন নানাবিধ চিকিৎসার ফলে তা প্রায় নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে। পাঁচ আগে দুর্ভিক্ষ ও মহামারির কবলে পরে জনপদের পর জনপদ শ্মশানে পরিণত হত। এভাবে প্রাকৃতিক কারণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হত। এখন জাতীয় সরকার ও সেইসঙ্গে সমগ্র বিশ্ব ও বিবেক সজাগ থাকায় দুর্ভিক ও মহামারি সংঘটিত হয় না। ছয় অধিকাংশ মানুষই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন নন। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্যে পরিবার-পরিকল্পনার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁরা অবহিতই নন। অবশ্য এজন্য দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও কুসংস্কারই অনেকাংশে দায়ী।
মানুষের নিত্যপ্রয়োজ সামগ্রীর সমানুপাতিক সরবরাহ
শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি গ্রহণ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি-সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেখতে হবে দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ সম্ভাবনা কতখানি, তার যথার্থ পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদকে সম্পূর্ণ ব্যবহার করে ক্রমবর্ধমান। জনসংখ্যার সঙ্গে উৎপাদিত ভোগ্যপণ্যের আনুপাতিক সমতা রক্ষা করার দিকে সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। খানা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আবাস, পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এগুলির পরিমিত সরবরাহ একান্ত অপরিহার্য। সুতরাং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এগুলি পাল্লা দিয়ে না ইটিলেই পদে পদে বিপর্যয়। দারিদ্র্য, অভাব-অনটন, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য, অসন্তোষ, বিক্ষোভ, সংঘাত, হানাহানি সমাজে নিত্য অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ানো অতি স্বাভাবিক।
মানবিক ও সামাজিক উদার দৃষ্টিভঙ্গি
জনসংখ্যার বৃদ্ধি যাবতীয় উন্নয়নের গতিকে স্তব্ধ করে দেবে, এ মেনে নেওয়া মূঢ়তার নামান্তর মাত্র। কিন্তু তা বলে পরিবার-পরিকল্পনার নামে পীড়ন-তাড়ন নিগ্রহাদি চললে তার ফল হবে উলটো। দেশে বিগত জরুরি অবস্থায় এই মানিকর পরিস্থিতির দৃষ্টান্ত ভারতীয় মানুষ আজও ভোলেনি। তার ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণকে ঘিরে ভীতি আর অনীহা মানুষকে পরিবার-পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছুদিনের জন্য হলেও অনাগ্রহী করেছিল। সেজন্য পরিবার পরিকল্পনা ব্যাপারকে মানবিক ও সামাজিক উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখার মতো বাতাবরণ গড়ে তোলা আবশ্যক।
উপসংহার
ভারত উন্নয়নশীল দেশ। তার অসংখ্য সমস্যা জাতীয় জীবনকে করেছে ভারাক্রান্ত। সেইসঙ্গে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি তাকে দুষ্টগ্রহের মতো তাড়া করছে। এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্তির উপায় জনসংখ্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনাকে নিশ্চিত ভাবে সুযোগ গ্রহণ নয় রূপায়ণে তাকে উদ্যোগী হতে হবে এই উদ্যোগ সর্বত্রভাবে আন্তরিক ও বাস্তবসম্মত হওয়ায় দরকার।
The end