জাপানের শিল্প বলয় অঞ্চল হিসেবে টোকিও ইয়াকোহামা শিল্পাঞ্চল ও কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চল সম্বন্ধে আলোচনা কর।
Discuss the Tokyo Yako Hama Industrial Zone and the Kobe and Osaka Industrial Zones as Japan's Industrial Zones.
জাপানে সর্বত্রই শিল্প গড়ে উঠেছে তবে অধিকাংশ শিল্পই টোকিও- ইয়োকোহামা থেকে পশ্চিমদিকে উত্তর-পশ্চিম কিয়ুশু পর্যন্ত প্রায় 1000 কিমি দীর্ঘ শিল্পবলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই শিল্পবলয় জাপানের 75-80 শতাংশ শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করে। এই শিল্পবলয়ে চারটি শিল্পাঞ্চল দেখা যায়—(ক) টোকিও-ইয়োকোহামা বা কেইহিন (Keihin) শিল্পাঞ্চল। (খ) কোবে- ওসাকা বা হানশিন শিল্পাঞ্চল। অন্য দুটি হল— (গ) নাগোয়া বা ইসে উপসাগরীয় শিল্পাঞ্চল এবং (ঘ) উত্তর কিয়ুশু শিল্পাঞ্চল।
টোকিও-ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চল
এই শিল্পাঞ্চলটি হনশু দ্বীপে টোকিও উপসাগরে (Tokyo wan)-র পশ্চিম উপকূল বরাবর কোয়ান্তো সমভূমিতে অবস্থিত । কোয়াল্ডোর জাপানের বৃহত্তম সমভূমি। fwan = উপসাগর]। এই অঞ্চলের প্রধান প্রধান শিল্পকেন্দ্র ও শিল্পগুলি হল :
• টোকিও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও জাপানের রাজধানী। এখানে লৌহ ও ইস্পাত,
বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ, রাসায়নিক দ্রব্য, খাদ্যদ্রব্য, মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্প গড়ে উঠেছে।
টোকিও থেকে প্রায় 26 কিমি দূরে মোটামুটি দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে অবস্থিত। এখানে সুতি ও রেশম বস্ত্র বয়ন, যন্ত্রপাতি নির্মাণ, ইস্পাত, মোটর গাড়ি নির্মাণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ, তৈলশোধন, জাহাজ নির্মাণ ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্প গড়ে উঠেছে। ইয়োকোহামা জাপানের বৃহত্তম বন্দর
* কাওয়াসাকি ইয়োকোহোমা থেকে প্রায় 12 কিমি দূরে উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থিত। এখানে জাহাজ নির্মাণ, ভারী যন্ত্রাদি নির্মাণ, রাসায়নিক, সিমেন্ট, কাচশিল্প গড়ে উঠেছে।
টোকিও, কাওয়াসাকি ও ইয়োকোহামা এই তিনটি কেন্দ্রে জাপানের 20% লোক বাস করে ও দেশের 25% শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদিত 21) হয়। ভারী শিল্প ছাড়া সব শিল্পই মাঝারি ও ক্ষুদ্র আয়তনের। কিয়ুশু বহু শিল্প কুটীর শিল্প হু। রূপেও গড়ে উঠেছে। টোকিও ও ইয়োকোহামা বন্দরের ব্যাপক উন্নতি সাধনের পর এদের সংযুক্ত নামকরণ করা হয় Keihin Port। তাই টোকিও-ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চলটিকে কেইহিন শিল্পাঞ্চলও বলে। টোকিও-ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণসমূহ \\
ভূমি : জাপানের 85% ভূমিই পাহাড়ি অঞ্চল কিন্তু এই শিল্পাঞ্চল জাপানের সর্ববৃহৎ সমভূমি
কোয়াস্তো-তে অবস্থিত। সুতরাং এখানে কারখানা গড়ে তোলার পক্ষে উপযুক্ত প্রশস্ত ভূমি রয়েছে। বিদ্যুৎ : এখানকার পাহাড়ি অঞ্চল ও খরস্রোতা নদী জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পক্ষে উপযুক্ত। সুতরাং, এখানে প্রচুর পরিমাণে স্থানীয় সুলভ জলবিদ্যুৎ পাওয়া যায়। উপরন্তু উত্তর কিছুশু ও হোক্কাইদো থেকে কয়লা আনা হয়।
জল : এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে সুমিদা, তামা প্রভৃতি বড়ো নদী বয়ে গেছে। ফলে নদী থেকে শিল্প
ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য প্রচুর পরিমাণে নির্মল জল পাওয়া যায়। > বন্দর : এই শিল্পাঞ্চলে টোকিও ও ইয়োকোহামা-র মতো বন্দর রয়েছে। ইয়োকোহামা জাপানের বৃহত্তম বন্দর।
0 রেল ও সড়ক । এখানকার রেল ও সড়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। শিনকানসেন পৃথিবীর দ্রুততম রেল পরিষেবা প্রদান করে।
বাজার এখানে জাপানের প্রায় 20 শতাংশ লোক বাস করে। ফলে ওই অঞ্চলেই শিল্পোত্পাদিত
দ্রব্যের ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাহিদা রয়েছে। 0 শ্রমিক : এখানে সুলভে ও যথেষ্ট সংখ্যায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায়।
টোকিও উপসাগরকে ঘিরে অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রগুলি হল মিতাকা, মুসাশিনো, কাওয়াগুচি,
ফুনাবাশি প্রভৃতি।
■ কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চল
জাপানের এই শিল্পাঞ্চলটি হনশু দ্বীপে ওসাকা উপসাগর (Osaka Wan)-কে বেষ্টন করে কিনকি (hindi) সমভূমি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। ওসাকা উপসাগর হল জাপানের বিখ্যাত গুরুত্বপূর্ণ Inland Sea-র (- অন্তর্দেশীয় সাগর) অংশ। অগভীর এই সমুদ্রে জোয়ার ভাটার প্রাবল্য খুব বেশি। কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চলকে হানশিন শিল্পাঞ্চল ও বলে।
কিনকি সমভূমি একাধিক বেসিন (hasin) নিয়ে গঠিত এবং বিভিন্নন্ন বেসিনে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এই শিল্পাঞ্চলের প্রধান প্রধান শিল্পকেন্দ্র ও গড়ে ওঠা শিল্পগুলি হল-
কোবে
ওসাকা উপসাগর মাকাওয়াবারাশ
উপকূলে অবস্থিত। সমুদ্রবন্দর (sea port)। এখানে বন্দরের সুযোগসুবিধা খুব বেশি। বাণিজ্যমূল্যের দিক ) থেকে এটি জাপানের প্রধান বন্দর (জাহাজ নির্মাণ এই কেন্দ্রের সর্বপ্রধান শিল্প। অন্যান্য শিল্পের মধ্যে ইস্পাত, রবার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ, বস্ত্রবয়ন প্রভৃতি শিল্প উল্লেখযোগ্য।
ওসাকা
এই শিল্পকেন্দ্রটি ওসাকা উপসাগরের উত্তরাংশেই কোবে শিল্পকেন্দ্রের যেন অপরদিকে পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এটি জাপানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর এবং প্রধান বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র ওসাকা জাপানের সর্ববৃহৎ সুবি বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্র। তাই ওসাকাকে জাপানের ম্যানচেষ্টার বলা হয় । এখানে সুতি বস্ত্র ছাড় রেশম বস্ত্র ও উৎপাদিত হয়। উপরন্তু এখানে রেয়ন শিল্পের বহু কারখানা আছে। এই কেন্দ্রে ইয়োদো (Xodo) নদী থেকে বহু খাল ও চ্যানেল প্রসারিত হয়েছে। ফলে এখানে বস্ত্র শিল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণে স্বচ্ছ জল পাওয়া যায়। এই কেন্দ্রের অন্যান্য
উল্লেখযোগ্য শিল্পগুলি হল ইস্পাত, বৈদ্যুতিক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন, সিমেন্ট জাহাজ নির্মাণ প্রভৃতি। কোধের মতো ওসাকাও একটি সমুদ্রবন্দর।
• আমাগাসাকি
• ওসাকা শিল্পকেন্দ্রের অনতিদূরে ইয়োদো নদীর অপরদিকে অবস্থিত এখানে রাসায়নিক ও ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।
নিশিনোমিয়া | ওসাকা উপসাগরের উপকূলে আমাগাসাকির পশ্চিমদিকে অবস্থিত। খোনে রাসায়নিক, রবার, বস্তুবয়ন, যন্ত্রপাতি, প্রসাধন প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেে • সাকাই ওসাকা উপসাগরের পূর্ব উপকূলে ওসাকার মোটামুটি দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত। খানে যন্ত্রপাতি নির্মাণ, রাসায়নিক দ্রব্য ও রং, সার, মোটরগাড়ি বিভিন্ন অংশ নির্মাণ প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠে
, কিশিওয়াদা ওসাকা উপসাগরে পূর্ব উপকূলে সাকাই শিল্পকেন্দ্রের মোটামুটি দক্ষিণদিকে সবস্থিত। বস্ত্রবয়ন এখানকার প্রধান শিল্প।
কিয়োতো ওসাকা শিল্পকেন্দ্রের প্রায় 45 কিমি দূরে দেশের অভ্যন্তর ভাগে অবস্থিত হলেও একে কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চলের অংশ বলেই ধরা হয়। কিয়োতো থেকে মাত্র 10 কমি দূরত্বের মধ্যে রয়েছে জাপানের, সর্ববৃহৎ হ্রদ বিওয়া (Biva)। কেন্দ্রটি পশ্চিম, উত্তর ও পূর্বদিকে পর্বত দ্বারা বেষ্টিত, কেবলমাত্র দক্ষিণদিকে খোলা। এখানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নর্মাণ শিল্প, রাসায়নিক শিল্প এবং বস্ত্রবয়ন শিল্প প্রধান। এছাড়া এখানে চিনামাটির দ্রব্য ও লাক্ষার জিনিস তৈরি করা প্রভৃতি নানাপ্রকার শিল্প গড়ে উঠেছে। কিয়োতো কেন্দ্রটি এগারো শা বছর ধরে জাপানের রাজধানী ছিল। ফলে এখানে বিত্তবান ও শিল্পরসিকদের বাস ছিল। 5
কলে এখানে চারুশিল্প ও হস্তশিল্প গড়ে উঠেছিল। কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চলে যেসব শিল্পগড়ে উঠেছে, সেগুলিকে সাধারণভাবে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়(ক) ধাতব শিল্প, যেমন—ইস্পাত, (খ) যন্ত্র ও যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প (গ) বজ্রবয়ন শিল্প—সুতি, রেশম ইত্যাদি। (ঘ) অন্যান্য শিল্প-রাসায়নিক, জাহাজ নির্মাণ তৈলশোধন, বিমানপোত নির্মাণ প্রভৃতি।
কোবে ওসাকা শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণসমূহ •
ওসাকা উপকূলে বহু সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠেছে। উর্দু জাপান স্রোত প্রবাহিত হয় বলে বন্দরগুলি বারো মাস বরফমুক্ত থাকে। বন্দর বেশি থাকার ফলে বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যেমন—তুলা, আকরিক লোহা ইত্যাদি আনা যায়, তেমনই শিল্পব্য রপ্তানিও করা যায়। কিনকি সমভূমি যথেষ্ট বড়ো বলে শিল্প কারখানা ইত্যাদি স্থাপনের সুবিধা হয়েছে।
বিভিন্ন দিকে রেলপথ প্রসারিত হওয়ার ফলে অভ্যন্তরভাগ পর্যন্ত পশ্চাদভূমি বিস্তৃত হয়েছে।
= সমুদ্র নিকটে বলে বায়ুতে যথেষ্ট আর্দ্রতা থাকে। অভ্যন্তরভাগে বিওয়া হ্রদের (64 কিমি দীর্ঘ 18 কিমি প্রশস্ত) জনাই কিয়োটোতে বজ্রবয়ন শিল্প গড়ে উঠতে পেরেছে।
ল) নদীগুলি থেকে বস্ত্রবয়নশিল্পের উপযুক্ত স্বচ্ছ জল পাওয়া যায়। এই শিল্পাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদী হল
ইয়োদো (Yodo) |
- এখানে য়োদো ছাড়া আর কোনো বড়ো নদী নেই, কালাও পাওয়া যায় না। সুতরাং স্থানীয় বিদ্যুৎশক্তি । বিশেষ উৎপাদিত হয়না। উত্তর কিয়ুশু ও হোক্কাইদো থেকে ও বিদেশ থেকে কয়লা এনে তাপবিদ্যুৎ
উৎপাদন করে সরবরাহ করা হয়।