WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আঞ্চলিক শক্তির উত্থান অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় | class 8 history lesson 2

মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মারা যাওয়ার পর ৫০ বছর খুব দ্রুত মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে।

 আঞ্চলিক শক্তির উত্থান

অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস 

দ্বিতীয় অধ্যায় 

class 8 history lesson 2 



মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মারা যাওয়ার পর ৫০ বছর খুব দ্রুত মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে। সম্রাট জাহাঙ্গির ও শাজাহানের সময় থেকেই মুঘলদের শাসন কাঠামো ছোটোবড়ো সমস্যা আঘাত হানছিল। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তা বড়ো আকার নেয়। তাঁর উত্তরাধিকারীদের অযোগ্যতার ফলেই এমন অবনতি ঘটেছিল বলা যায়। সাম্রাজ্যের ভিতরের বিদ্রোহ অথবা বাইরের আক্রমণ মোকাবিলা করার মতো সামরিক ব্যবস্থা সেইসময় ছিল না।


ঔরঙ্গজেবের আমল থেকেই জায়গিরদারি ও মনসবদারি পাওয়া নিয়ে অভিজাতদের মধ্যে যে কোন্দল চলছিল তা তাঁর মৃত্যুর পর তীব্র আকার ধারণ করে। ভূমি-রাজস্বের আয়বায়ের নানা গরমিলের জন্য দেশের কৃষিব্যবস্থায় যে ভয়ংকর চাপ সৃষ্ট হচ্ছিল তাতে একাধিক কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুঘল কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক শক্তিগুলি এক একটি অঞ্চলে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিল। তারা অবশ্য মুঘল কর্তৃত্বের বৈধতা স্বীকার করেই নিজেদের অঞ্চলে নিজেদের শাসনকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মুঘল সম্রাটের অনুমোদনের মুখাপেক্ষী হয়েছিল। এইভাবে অষ্টাদশ শতকে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির উত্থানে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছিল। আঞ্চলিক এই শক্তিগুলির মধ্যে যে তিনটি প্রধান ছিল তারা হল বাংলা, হায়দরাবাদ ও অযোধ্যা।


• বাংলা : 

সম্রাট ঔরঙ্গজেব সুবা বাংলার দেওয়ান হিসেবে মুরশিদকুলি খানকে পাঠিয়েছিলেন। বাংলার দেওয়ান পদে মুরশিদকুলি খান বহাল ছিলেন সম্রাট বাহাদুর শাহর আমল পর্যন্ত। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুরশিদকুলি খানকে নাজিম পদ দেওয়া হয়। ফলে দেওয়ান ও নাজিম এই উভয়পদের দায়িত্ব লাভ করে মুরশিদকুলি খানের নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে বাংলার উত্থান ঘটে।

* মুরশিদকুলি খানকে ঔরঙ্গজেবের চিঠি (প্রথম চিঠি) : মুনশি ইনায়েত উমাকে দিয়ে মুঘল বাদশাহ রাজের একটি চিঠি বাংলার দেওয়ান মুরশিদকুলি খানকে পাঠিয়েছিলেন। ফারসি ভাষায় লিখিত এই চিঠিতে বাংলার দেওয়ানের প্রতি মুঘল সম্রাটের মনোভাব বোঝা যায়। মুনশির লেখা ওই চিঠির সারকথা হল, বাদশাহের আজ্ঞা অনুসারে আপনাকে এই লিখে জানানো হচ্ছে যে, এখন বিহার প্রদেশের দেওয়ান পদও আপনাকে দেওয়া হারছে। সুতরাং আপনি নিজে উড়িষ্যায় না গিয়ে সেখানে এক নায়ের (প্রতিনিধি) রেখে জাহাঙ্গির নগর অর্থাৎ ঢাকা শহরে ফিরে আসবেন। অনেক কাজ এখন আপনাকে করতে হচ্ছে। সুতরাং এমন এক কেন্দ্রস্থলে আপনি অবস্থান করুন যাতে সমস্ত স্থান আপনার পক্ষে তত্ত্বাবধান করা সম্ভব হয়।।


* দ্বিতীয় চিঠি ঃ ইতিপূর্বেই আপনাকে বাদশাহের হুকুম অনুসারে লেখা হয়েছে যে, বহুাদেশ ও উড়িষ্যা থেকে যে নব্বই লক্ষ টাকার সরকারি খাজনা আদায় করা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও অন্যান্য অধিক যেসব টাকা সংগ্রহ হয়েছে সেগুলি অবিলম্বে সদরে হুজুরের নিকট পাঠিয়ে দিন। আশা করি, বাদশাহের তাগিদ অনুযায়ী তাঁর এই আঙ্গ দ্রুত কার্যে পরিণত করবেন।


← পরবর্তী চিঠি : আপনি বাদশাহি রাজস্ব সংগ্রহে যেভাবে পরিশ্রম করছেন এবং বাদশাহের স্বহস্ত লিখিত কয়েক ছত্রসহ ফর্মান প্রার্থনা করেছেন তা সবই বাদশাহ অবগত হয়েছেন। এজন্য সম্রাট অনুগ্রহপূর্বক আপনাকে অতিশীঘ্রই উজ্জ্বল সম্মানসূচক পরিচ্ছদ অর্থাৎ খেলাং এবং অর্মান পাঠিয়ে দেবেন।


উপরিউক্ত চিঠিগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, ঔরঙ্গজেবের শেষ কয়েক বছরের রাজস্ব কালে টাকার অভাব এতই হয়েছিল যে তা তিনি সুবা বাংলার প্রেরিত রাজস্বের ওপরেই প্রায় সম্পূর্ণ পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। ফারসি ভাষায় লেখা (চিঠিগুলির বাংলার তর্জমা করেছেন ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার।


বাংলায় মুরশিদকুলি খানের আমলে যেসব ক্ষমতাবান জমিদার ছিলেন তাঁরা নাজিমকে নিয়মিত রাজস্ব দেওয়ার পরিবর্তে নিজেদের অঞ্চলে ক্ষমতা ভোগ করতেন। মুরশিদকুলির আমলে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় স্থলপথে ও জলপথে বাণিজ্যিক রপ্তানি বেশ ভালোই চলেছিল। তখন হিন্দু ব্যবসায়ী উমিচাদ এবং আর্মেনীয় ব্যবসায়ী খোজা ওয়াজেদ আলি ছিলেন ওই ব্যবসায় দুজন প্রভাবশালী বণিক। এই প্রভাবশালী বণিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতাও ছিল ভীষণ। শাসকেরা এদের সহায়তার ওপর নির্ভর করতেন। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, সুবা বাংলার কোশাগার ও টাকশাল মুরশিদাবাদের বিখ্যাত মূলধন বিনিয়োগকারী জগৎ শেঠের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হত।

জগৎ শেঠ ও ১৩০২ খ্রিস্টাব্দে হিরাপদ শাহ রাজস্থান থেকে পাটনা চলে গেলে বড়ো ছেলে মানিকচাঁদ ঢাকার মহাজনি কারবার করাতে যান। মুরশিদকুলি খানের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক ছিল বলে মানিকচাঁদ একসময় ঢাকা থেকে মুরশিদাবাদে আাবসা করাতে চলে আসেন। মানিবটাদের পর তাঁর ভাগ্নে ফাতেহাদ ওই মহাজনি কারবারের হাল পরলে তার সুনাম এতই ছড়িয়ে পড়ে যে মুঘল সম্রাট তাঁকে জগতের শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। তারপর ওই উপাধি বংশানুক্রমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে জগৎ শেঠ পদরি একটি বণিক পরিবারের উপাধি হয়ে দাঁড়ায়। নিজেদের মুদ্রা তৈরি, বিপুল মহাজনি ব্যাবসার জন্য মুরশিদাবাদের নবাবের দরবারেও তাদের বিশাল প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই জগৎ শেঠদের সহায়তাতেই সিরাজ-উদ দৌলাকে হটিয়ে ক্ষমতালোভী মিরজাফরকে নবাবের সিংহাসনে বসায়।


বাংলার নবাব মুরশিকুলি খান ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মারা গেলে তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে গণ্ডগোল শুরু হয়। এই সুযোগে নিজেদের স্বার্থ চিন্তা করে জগৎ শেঠ। ও কয়েকজন ক্ষমতাবান জমিদার নবাবের সেনাপতি আলিবর্দি খানকে সিংহাসনে বসান। আলিবর্দি খান মুঘল কর্তৃত্বকে স্বীকার করলেও বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় নিজের একচ্ছত্র শাসন চালিয়ে যেতেন। তিনি নিয়মিত রাজস্বও প্রেরণ করতেন না মুঘল দরবারে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা গেলে তাঁর দৌহিত্র অর্থাৎ কন্যার পুত্র সিরাজ-উদ-দৌলা তরুণ বয়সেই নবাবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শীঘ্রই নবাবের দরবারে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধ তৈরি হলে সকলের মিলিত ষড়যন্ত্রে সিরাজের পতন হয় এবং বাংলার শাসনকর্তৃত্ব ব্রিটিশ কোম্পানির হাতে চলে যায়।


* বাংলায় বর্গিহানা : 

১৭৪২ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মারাঠারা বাংলা ও উড়িযায় যে ব্যাপক লুঠতরাজ ও আক্রমণ চালায় তা বর্গিহানা নামে প্রবাদে পরিণত হয়েছে। নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদেও বর্গিদের এই আক্রমণ শুরু হলে নবাব ও মারাঠাদের মধ্যে একটি সন্ধি হয়। সন্ধির শর্ত অনুযায়ী বর্গিরা আর উড়িষ্যার ভালেশ্বরের কাছে সুবর্ণরেখা নদীর সীমানা পার হয়ে আসবে না। ফলে অসংখ্য মানুষ পশ্চিম প্রান্ত ছেড়ে পূর্ব ও উত্তর বাংলা এবং কলকাতায় চলে আসে। নবাবের পরিবর্তে একসময় ব্রিটিশ কোম্পানি বর্গি আক্রমণে সন্ত্রস্ত মানুষদের 'রক্ষাকারী' হয়ে | উঠেছিল। কলকাতায় মারাঠা আক্রমণ তথা বর্গিহানা রোধ করাতে তারা যে মারাঠা খাল তৈরি করেছিল তার বর্ণনা ব্রিটিশ কুঠির চিঠিপত্রে জানা যায়। এইরকম একটি চিঠিতে যা পাওয়া যায় তার সারকথা এইরকম--


কলকাতা, কাশিমবাজার ও পাটনায় ব্রিটিশদের কারবার কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। কলকাতায় একশো নকসরিয়া সেনা নিযুক্ত করে স্থানীয় সাহেবদের নিয়ে একটি মিলিশিয়া গঠন করা হল। কলকাতার বণিকগণ নিজেদের উদ্যোগে শহর ঘিরে একটি খাল খনন করবে। ব্রিটিশ কাউন্সিল এই সভারে ২৫,০০০ টাকা ধার দিলে ১৭৪৪ এর • মারাঠা ভিড় নামে এই খাল ফোর্টের নরওয়াজা অর্থাৎ বর্তমানের জিপিএ থেকে অর্থাৎ বর্তমানের সল্টলেক অবধি খননকার্য শেষ হয়েছে। পরবর্তী পর্যাে গোবিন্দপুরের সীমানা পর্যন্ত ওই খাল খননের কাজ চলেছে। বাতাম লিখিত মহারাষ্ট্র পূরণ এর অংশ ও ব্রিটিশ কৃমির চিঠির বক্তব্যসমূহ


ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের কর্মীর্য হাঙ্গামা' প্রবন্ধ থেকে গৃহীত হয়েছে।


হায়দরাবাদ : 

মির কামার উদ-দিন খান সিদ্দিকি ঔরঙ্গজেবের দরবারে এতই শক্তিশালী অভিজাত ছিলেন যে ঔরঙ্গজেব তাঁকে চিন বুলিচ খান উপাধি দেন। পরে তিনি সম্রাট ফারুকশিয়রের কাছ থেকে নিজাম-উল-মূলক উপাধি এবং সম্রাট মোহম্মাদ শাহর কাছ থেকে আসফ ঝা উপাধি লাভ করেন। হায়দরাবাদে তখন মুঘল প্রাদেশিক শাসক হিসেবে মুবারিজ খান শাসনকাজ চালাচ্ছিলেন। নিজাম-উল-মূলক ওরফে আসফ বা ওই মুবারিজ খানকে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত করেন এবং ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে হায়দরাবাদ। অঞ্চলে নিজের আধিপত্য কায়েম করেন। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে তাঁরই নেতৃত্বে হায়দরাবাদ মুঘল কর্তৃত্ব স্বীকার করলে স্বাধীন একটি রাজ্যরূপে আত্মপ্রকাশ করে। তাঁর পরিচালনায় হায়দরাবাদি শাসনে মুঘল কাঠামো বজায় থাকলেও প্রশাসনে অনেক নতুন লোক নিযুক্তি পেয়েছিল এবং জায়গিরদারি রুমে বংশানুক্রমিক হয়ে পড়েছিল।


• অযোধ্যা : 

মুঘল প্রশাসক হিসেবে সাদাৎ খান অযোধ্যার স্থানীয় রাজা ও গোষ্ঠীর নেতাদের বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হলে মুঘল সম্রাট মোহম্মদ শাহ তাঁকে বুরহান-উল মূলক উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে সাদাৎ খানের নেতৃত্বে অযোধ্যায় মুঘ কর্তৃত্বকে মান্যতা দিয়েই স্বশাসিত প্রশাসন চালু হয়। এরপর সাদাৎ খান মুঘল সম্রাটকে দিয়ে নিজের জামাই সফদরজং-কে অযোধ্যার প্রশাসকরূপে নিযুক্ত করান।


সাদাৎ খানের সমর্থক এক নতুন শাসকগোষ্ঠী তৈরি হয় অযোধ্যায়। তাদের মধ্যে মুসলমান, আফগান ও হিন্দুরা ছিল সংখ্যায় বেশি। ওই সময়ে অযোধ্যায় ব্যাবসাবাণিজ্যে খুবই লাভ হচ্ছিল। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে সাদাৎ খান মারা গেলে অযোধ্যায় প্রায় স্বাধীন রাজনৈতিক ব্যাবসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে সফদরজং মারা গেলে তাঁর ছেলে খুজা-উদ-দৌলা অযোধ্যার রাজা হন। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ অবধি সুজার ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ ছিল।


> বাংলার নবাব ও ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্কের বিবর্তন ও মুরশিদকুলি খানের সময় বাংলায় যেসব ইউরোপীয় বণিক ও বাণিজ্য কোম্পানি ব্যাবসা করত তাদের মধ্যে ক্ষমতাশালী ছিল ব্রিটিশ, ওলন্দাজ ও ফরাসিরা। এদের মধ্যে আবার সর্বাধিক প্রভাবশালী ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক গোষ্ঠীসমূহ। নবাব হিসেবে মুরশিদকুলি খান ওই ইউরোপীয়দের বিরোধিতা না করলেও নিজের মর্যাদা রক্ষায় যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। বাস্তবে মুঘল সম্রাট ফারুখশিয়ারের ফরমানের দ্বারাই মুরশিদকুলি খানের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির সম্পর্ক প্রভাবিত হয়েছিল।

ফারুখশিয়রের ফরমান :

 ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট ফররুখশিয়রের একটি আদেশ বা ফরমান অনুযায়ী বাংলা টিশ কোম্পানি বছরে মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে দিনা শখে অবাধ বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলে ব্রিটিশ কোম্পানি ৩৮টি গ্রামের জমিদারি কিনতে পারবে। কোম্পানির পণ্য কেউ চুরি করলে বাংলার নবার তাকে যোগ্য শাস্তি দেবেন এবং কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেবেন। ব্রিটিশ কোম্পানি প্রযোজনমতো নবাবের মুরশিদাবাদ পারবে।


বাস্তবে ব্রিটিশ কোম্পানিকে প্রদত্ত মুঘল বাদশাহ ফারুখশিয়রের ফরমান ভবিষ্যতে নবাবের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের পথ প্রশস্ত করে গিয়েছিল। মুরশিদকুলি খান মুঘল কর্তৃত্বকে মান্যতা দিলেও তিনি সুবা বাংলায় স্বাধীন রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মাঝে ব্রিটিশ কোম্পানিকে মুঘল সম্রাটের প্রদত্ত অবাধ বাণিজ্যের ফরমান মুরশিদকুলিকে মারাত্মক অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলার শাসক হিসেবে ব্রিটিশ কোম্পানির ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে নবাবের অল্পবিস্তর বিরোধ দেখা দিলে তা জগৎ শেঠদের মধ্যস্থতায় দুরীভূত হয়ে যায়।

মুরশিদকুলির পর আলিবর্দি খান বাংলার নবাব হয়ে বুঝতে পারেন যে, ব্রিটিশ

কোম্পানির ব্যাবসা বাংলায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাবে। তবে তিনিও সর্বদা সচেতন

থাকতেন যাতে ব্রিটিশ কোম্পানি নবাবের পদমর্যাদার এতটুকু হানি না ঘটাতে পারে। তিনি বিদেশি বণিক ও কোম্পানিগুলির রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা কোনোভাবেই বাড়তে দেননি। আবার ওই বণিক কোম্পানিগুলি যাতে নিজেদের মধ্যে কলহ না করে সেদিকেও তিনি কড়া নজর রাখতেন। বণিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও তিনি যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন। ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা তথা বর্গি আক্রমণের সময় আলিবর্দি খানের দাবিমতো ব্রিটিশ কোম্পানি ৩০ লক্ষ টাকা না দিলে তাদের সঙ্গে নবাবের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। তবে তারা কোনোভাবেই আলিবর্দির বিরুদ্ধে এঁটে উঠতে পারেনি।


• সিরাজ উদ-দৌলা ও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক 

পলাশির যুদ্ধে সুবা বাংলার নবাব আলিবর্দি খান তাঁর দৌহিত্র অর্থাৎ মেয়ের ছেলে সিরাজ উদ-দৌলাকে আলোর সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু নিরাজের এই ক্ষমতালাভে ঘরে বাইরে কেউই সন্তুষ্ট ছিলেন না। সিরাজের অধিকাংশ আত্মীয় এবং আলিবর্দি খানের বগ্নি বা সেনাপতি মিরজাফর সিরাজের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। এ ছাড়া প্রায় শুরু থেকে সিরাজের সঙ্গ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভিন্নতা বাড়তে থাকে। নবাব হওয়ার পাই ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গো সিরাজের বিরোধ চরমে চলে যায়।

সিরাজের ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবের কারণ খোজা ওয়াজিদকে লেখাচিঠি ঃ 

সিরাজ-উদ-দৌলা ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ১ জুন মুরশিদাবাদ থেকে আমেনীয় শোডা ওয়াজিদকে ব্রিটিশদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক চিঠিটি লিখেছিলেন তার সারাংশ সিরাজের জবানিতে এইরকম- আমি ইংরেজদের তাড়ান। কারণ প্রথমত তারা বাদশাহি সাম্রাজ্যের চিরপ্রচলিত সুপ্রতিষ্ঠিত আইন না মেনে সুদৃঢ় দুর্গ নির্মাণ করেছে, বিরাট পরিখা খনন করেছে। দ্বিতীয়ত, তারা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার জন্য প্রদর "দত্তক নিয়ে এমনই তার অপব্যবহার করছে যে তা বাদশাহি শুক্ষের ক্ষতি ঘটাচ্ছে। তৃতীয়ত কিছু বাদশাহি কর্মচারী নিজেদের দায়িত্বে ফাঁকি দিচ্ছে ইংরেজরা তাদের আশ্রয় দিয়ে যথোপযুক্ত শাস্তিদানে বাধা দিচ্ছে। এসব যুক্তির শেষে সিরাজ একথাও লিখে জানান যে, ইংরেজরা যদি এসব অন্যায় স্বীকার করে এবং নবাব জাফর । অর্থা মুরশিদকুলি খানের আমলের নিয়ম অনুযায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য করে তবে তাদের দেশে থাকতে দেন। তা না হলে শীঘ্রই তাদের এখান থেকে তাড়িয়ে দেব।


শেষ পর্যন্ত ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ব্রিটিশদের হারিয়ে কলকাতা দখল করে তার 'আলিনগর' নাম দিলেন। কোম্পানির কর্তাব্যক্তি হলওয়েল অভিযোগ জানিয়ে লিখলেন কলকাতা দখল করে সিরাজ নাকি একটি ছোট ঘরে ১৪৬ জন ব্রিটিশ নরনারীকে বন্দি করে রেখেছিলেন। তাঁর মুখের এই কথা গুজবের মতো ছড়িয়ে পড়ে 'অন্ধকূপ হত্যা' বলে প্রচারিত হতে থাকে। কিন্তু এই ঘটনাকে অবিশ্বাস্য প্রমাণ করে ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় তাঁর 'অন্ধকূপ হত্যা রহস্যনির্ণয়' প্রবন্ধে লিখলেন।



* অন্ধকূপ হত্যা : 

যাঁরা অন্ধকূপ কারাগারে মর্মান্তিক যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা গেলেন তাদের স্বদেশীয় স্বজাতীয় সমসাময়িক ইংরাজদের কাগজপত্রে অন্ধকূপ হত্যার প্রতিবাদে কোনোরূপ উক্তি দেখা গেল না কেন? যুদ্ধে হেরে গিয়ে বীর ইংরেজরা পলতার বন্দরে পালিয়ে গিয়ে গোপনে মন্ত্রণা করতে লাগলেন অথচ তাদের ওই সময়ের কোনো লেখাতেই এই নিষ্ঠুর হত্যার কোনো উল্লেখ নেই কেন? মাদ্রাজের ইংরেজ দরবারের বাবুদের অনুরোধ রক্ষার জন্য দাক্ষিণাত্যের নিজাম এবং আরকটের নবান বাহাদুর সিরাজকে যে চিঠি লিখেছিলেন তাতেও ওই অন্ধকূপ হত্যার প্রতিবাদের চিহ্ন নেই। ক্লাইভ এবং ওয়াটসন বাংলাদেশে এসে পলাশির যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ণ পর্যন্ত সিরাজকে তীব্র ভাষায় যেসব সাময়িক চিঠিপত্র লিখেছেন তাতেও এই হত্যার বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই কেন? কিংবা ইংরাজদের সঙ্গে সিরাজের যে আলিনগরের চুক্তি ঘোষিত হয় তাতেও এই মর্মান্তিক হত্যার নামগন্ধ নেই কেন?


হলওয়েল সাহেবই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ওই মিথ্যা রটনা করে চোখের জন ফেলেছিলেন। আর তাঁর এই কান্না শুনে মুখে মুখে অথরূপ হত্যার হাস্যকর রটন ছড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়া হলওয়েল যে কারাগৃহের বর্ণনা দিয়েছেন তা মাত্র ১৮ ফুট দীর্ঘ ১৮ ফুট প্রা। এমন ছোট ঘরে ১৪৬ জন নরনারী ঢুকতে পারে তা কোনোভাবেই বিশ্বাস করা যায় না। কারণ এক একজন মানুষের জন্য অন্তত ৬ ফুট দীর্ঘ ২ ফুট প্রস্থ এবং ২ ফুট বেধ সমন্বিত জায়গা প্রয়োজন। ওই ছোট্ট ঘরে যেখানে ৮১ জনের বেশি মানুষ ঠাসাঠাসি করেও থাকতে পারে না সেখানে ১৪৬ জন মানুষ থাকে কেমন করে?


ইংরেজরা কলকাতায় সিরাজকে বেশিদিন টিকতে দেয়নি। রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজরা সিরাজকে কোণঠাসা করে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে সন্ধিচুক্তিতে সই করায় এবং কলকাতা পুনর্দখল করে নেয়। কলকাতা তথা আলিনগর দখল করে ইংরেজ বণিকরা তাদের বাণিজ্যিক অধিকার ফিরে পায় এবং নবাব তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধা হন। এ ছাড়া তারা কলকাতায় আবার সুদৃঢ় দুর্গ তৈরি করে। এমনকি নিজেদের মুদ্রা (সিক্কা) তৈরি করারও ক্ষমতা লাভ করে।


১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে বিভিন্ন পক্ষের যে বিবাদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তা কাজে লাগিয়ে সুকৌশলী ক্লাইভ সিরাজকে আক্রমণ করে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করে।



+ নবাব মিরজাফর ও পলাশির লুণ্ঠন :

 পলাশির যুদ্ধে সিরাজকে হারিয়ে ইংরেজরা সিরাজের পরাজয়ের চক্রান্তকারী তারই সেনাপতি মির জাফরকে নবাবের সিংহাসনে বসায়। এর বিনিময়ে ইংরেজরা বাংলায় অবাধ বাণিজ্য করে, টাকা তৈরির অধিকার লাভ করে, ২৪ পরগনা জেলার জমিদারি ও সেখান থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে কোম্পানি তার সামরিক খরচ মেটানোর অর্থ আদায় করে। এ ছাড়া নবাবের রাজধানী মুরশিদাবাদে একজন ব্রিটিশ প্রতিনিধি নিযুক্ত করে।


এসব ব্যতীত ক্লাইভ ও অন্যান্য উঁচু পদের ইংরেজ কর্তারা ঘুষ বাবদ মির জাফরের কাছ থেকে প্রচুর সম্পদ ব্যক্তিগতভাবে আদায় করে। সব মিলিয়ে পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানি প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ মির জাফরের কাছ থেকে আদায় করে। ব্রিটিশদের এই বিপুল ধনরাশি সংগ্রহকে ইতিহাসে পলাশির লুণ্ঠন বলে চিহ্নিত করা হয়। এই ঘটনার নবাবের কোশাগার একেবারেই খালি হয়ে যায়।


১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। এইসময় মির জাফর কোম্পানির অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া পূরণ করতে না পারায় অন্যান্য ইংরেজ কর্তারা মির জাফরকে নবাবের আসন থেকে নামিয়ে দিয়ে তাঁরই জামাতা মির কাশিমকেই নবাব ঘোষণা করে। • 

মির কাশিন ও ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক:

 বক্সারের যুদ্ধ :


মির কাশিম সিংহাসন লাভ করে কোম্পানির আধিকারিকদের ২৯ লক্ষ টাকা পারিতোষিক দান করেন। এ ছাড়া ইংরেজরা বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামে জমিদারি লাভ করে। এসব পেয়ে ইংরেজরা প্রথম দিকে মির কাশিমকে তাদের হাতের পুতুল মনে করে। কিন্তু চতুর মির কাশিম মুরশিদাবাদ থেকে রাজধানী মুঙ্গেরে স্থানান্তর করেন। পুরোনো সেনাবাহিনীর বদলে নতুন সেনাবাহিনী গঠন করেন। এমনকি ক্ষমতাবান জগৎ শেঠদের থেকেও মির

কাশিম দূরে দূরে সরে থাকতে চাইলেন। ধীরে ধীরে কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে মিরকাশিমের সঙ্গে কোম্পানির দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। কোম্পানির বণিকদের তরফে বেআইনি ব্যাবসার ফলে বাংলার অর্থনীতি সমস্যার মুখে

পড়েছিল। নবাবি কোশাগার কঠিন অর্থসংকটে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে।



* বক্সারের যুদ্ধ ও দেওয়ানি লাভ : 

১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে মির কাশিম কাটোয়া, মুরশিদাবাদ, গিরিয়া, উদয়নালার যুদ্ধে হেরে গিয়ে অযোধ্যায় পালিয়ে যান। তথাপি ইংরেজরা মির কাশিমকেই বাংলার নবাব হিসেবে বেছে নেয়। তবে মির কাশিম ভিতরে ভিতরে অযোধ্যার শাসক সুজা উদ-দৌলা এবং দিল্লির মুঘল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইংরেজদের আক্রমণ করেন। | যুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানি জয়লাভ করে। এই যুদ্ধ বক্সারের যুদ্ধ বলা হয়। মির কাশিম ও সুজা উদ-দৌলা পালিয়ে যান। মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলম ইংরেজদের সঙ্গে আপস রফা করে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি প্রদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল বাদশাহের কর্তৃত্ব মুছে যায়। ইংরেজ বাংলার ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিস্তার করে। এ ছাড়া তারা অযোধ্যার শাসক সুজা উদ-দৌলাকে হারিয়ে উত্তর ভারতে তাদের ক্ষমতা ক্রমে ক্রমে দ্রুত ছড়াতে থাকে।


• দেওয়ানির অধিকার ও দ্বৈতশাসন : 

১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি লর্ড ক্লাইভ বাংলায় ফিরে আসেন। ততদিনে মির জাফর মারা গিয়েছেন। তাঁর পুত্র নজম উদ-দৌলা বাংলার নবাব হয়েছেন। বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভকে কাজে লাগিয়ে ক্লাইভ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ও অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলার সঙ্গে দুটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী সুজা উদ-দৌলা ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোধ্যার শাসনভার ফিরে পান। শুধুমাত্র কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল অযোধ্যা থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুঘল বাদশাহের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দিল্লির অধিকার মুঘল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলম ফিরে পেলে একটি ফরমান জারি করে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় দেওয়ানি অধিকার ব্রিটিশ কোম্পানিকে দেন। এই কারণে ব্রিটিশরা বাদশাহকে বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।




* দ্বৈত শাসনব্যবস্থা ঃ 


মির কাশিমের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইংরেজদের যে পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছিল তা তারা দেওয়ানির অধিকার লাভ করে যেনতেন প্রকারেণ তাড়াতাড়ি পূরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে একত্রে বলা হত সুৰা বাংলা। এই সুবা বাংলার দেওয়ানি লাভ করে ইংরেজরা বাংলায় এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক শাসনতন্ত্র কায়েম করে। বাস্তবে বাংলার তৈরি হয় দুজন শাসক। একদিকে বাংলার নতুন নবাব নজম উদ-দৌলার তাতে থেকে গেল রাজনৈতিক ও নিজামতের দায়িত্ব এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব। অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব ও রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করল ব্রিটিশ কোম্পানি। অর্থাৎ নবাব নজম উদ-দৌলার হাতে রইল শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষমতা শুনা রাজনৈতিক দায়িত্ব। আর ব্রিটিশ কোম্পানির হাতে রইল দায়িত্বশূনা অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অবাধ অধিকার। সুবা বাংলার এই শাসনব্যবস্থাই ইতিহাসে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা বা Dual System of Administration নামে চিহ্নিত হয়ে আছে।


একটি বিদেশি শক্তি ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই বিদেশি শক্তি বণিকের ছদ্মবেশে এদেশে এসে মোগল ভারতের একটি সুবার দেওয়ানির অধিকার লাভ করল। এরপর ক্রমাগত তারা তাদের বাণিজ্য চালানোর জন্য ব্রিটেন থেকে মূলধন আনার পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দিল। বাংলার রাজস্ব আদায় করেই নতুন করে তাদের মূলধন ব্যাবসায় বিনিয়োগ করতে লাগল। ফলে এদেশ থেকে তাদের অর্থসংগ্রহের পরিমাণ দ্বিগুণ হারে বেড়ে যেতে লাগল। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলার প্রধান শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর ক্রমে ক্রমে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্বের প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একসময় 'বণিকের মানদণ্ড' পরিণত হল ভারতবর্ষের বুকে 'রাজদণ্ডে'।



ছিয়াত্তরের মন্বন্তর : 

১৭৬৫ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় চলেছিল বৈতশাসন। এই কয়েক বছরে ব্রিটিশ কোম্পানি যেভাবে রাজস্ব সংগ্রহ করে তাতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দেই বাংলাতে দেখা দেয় ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ। বঙ্গাব্দের হিসেবে সেটা ছিল | ১১৭৬ বঙ্গাব্দ। তাই বাঙালির মুখে মুখে এই কঠিন সময়টি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে দুঃস্বপ্নের এক ইতিহাস হয়ে আছে।


বাণিজ্যের লোভে ইংরেজরা এই সময় সুবা বাংলার প্রজাদেরকে প্রায় পদদলিত করতে লাগল। জমিদারবাবুরা নিজেদের মানসম্ভ্রম বাড়াতে আর জমিদারি রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা ইংরেজদের পদলেহন করতে লাগল। ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় বাংলার চাষিরা অনেক আশা ও উৎসাহ নিয়ে মাঠে মাঠে লাঙল চযতে লাগল। কিন্তু বৃষ্টি হল না। ধান হল না। একটা বছর চাষিরা সম্পূর্ণ নিরাশ হল। পরের বছর অর্থাৎ ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দেও তারা বুক বেঁধে মাঠে মাঠে লাঙল করল। কিন্তু এ বছরেও আকাশ সম্পূর্ণ শুকনো হওয়ায় চাষির মাথায় বাজ পড়ল।

এতেও ইংরেজ কোম্পানির কোনো দরদ দেখা দিল না। তারা তাদের সেনাবাহিনীর।

জন্ম সংস্থানের জন্য ছলেবলে কৌশলে যথাসাধ্য ধান-চাল গোলাজাত করল।


১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের গোড়া থেকেই বাংলার মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছিল। এক সময় মহামারি দেখা দিল। গ্রামের পর গ্রাম শ্মশানে পরিণত হল। যারা বেঁচে ছিল তারা ঘোৰু মাহি বিক্রি করল। চাষের সর্যাম বিক্রি করল। এক সময় পুরা কন্যাও বিক্রি করে দিল। শেষ পর্যন্ত দেশে আর কোনো ক্রেতা খুঁজে পাওয়া গেল না।

১৭৭১ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ডের ডিরেক্টারগণের টনক নড়ল। তাঁরা এদেশে রাজস্ব সংগ্রহকারী তাদের লোকজনাদের দয়ামায়াশূন্য এমন চরিত্রের জন্য শিকার ও ঘৃণা জানিয়ে কঠিন চিঠি লিখলেন। ইংল্যান্ড থেকে ওয়ারেন হেস্টিংস এখানে এসে সবকিছু অনুসন্ধান করে জানালেন এত বড়ো মন্বন্তরেও রাজস্ব সংগ্রহে এতটুকু ত্রুটি ঘটেনি। দেশের এক-তৃতীয়াংশ কৃষক মারা গেছে। কৃষিকাজ প্রায় মুছে গেছে। উপরোক্ত লেখাটি ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রের মূল লেখার সারসংক্ষেপ


• কোম্পানি শাসনের বিস্তার: 

ব্রিটিশ রেসিডেন্স ব্যবস্থা : 

১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলা, অযোধ্যা ও হায়দরাবাদের রাজদরবারে নিজেদের প্রতিনিধি বা রেসিডেন্ট নিয়োগ করে। তাদের কাজই হল এই তিন রাজশক্তি ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পনা অথবা অবাঞ্ছিত কাজকর্ম করছে কিনা নজর রাখা। একসময় ধীরে ধীরে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ব্রিটিশ কোম্পানি 'পরোক্ষ শাসন' চালাতে লাগল। নিজেদের ব্যাবসায়িক স্বার্থরক্ষার জন্য বিভিন্ন রাজদরবারে রেসিডেন্ট নামে যে রাজ প্রতিনিধি রাখত তার চোখ এড়িয়ে আর কোনো ভারতীয় শাসকই নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে পারত না।


ইংল্যান্ড থেকে লর্ড ওয়েলেসলি এদেশে এসে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি চালু করলেন। ফলে তাঁর শাসনকালে ব্রিটিশ রেসিডেন্টরা আগ্রাসী নীতি অবলম্বন করলেন। কোনো কোনো রেসিডেন্ট আবার কোম্পানিকে সরাসরি এলাকা দখলের জন্য উসকে দিতে লাগলেন।

এরপর এলেন লর্ড কর্নওয়ালিশ। তাঁর সময়ে ব্রিটিশ রেসিডেন্টদের আগ্রাসী চিন্তা

খানিকটা কমে গেলেও তিনি মারা যাওয়ার পর পরোক্ষ শাসন কায়েম মুছে ফেলে সরাসরি

নতুন করে কোম্পানির এলাকা দখলের উদ্যোগ খুব বেড়ে ওঠে। এ ব্যাপারে লর্ড

ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

দেশীয় রাজ্য দখলের উদ্যোগ : 

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতি ঃ লর্ড ওয়েলেসলি প্রবর্তিত অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি এবং লর্ড ডালহৌসি প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানির শাসন বিস্তার প্রক্রিয়ায় বিশাল সহায়তা করে। হায়দরাবাদের নিজাম স্বেচ্ছায় অথবা ভীত হয়েই বলা যায় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া মারাঠা, শিখ ও অন্যান্য রাজশক্তিগুলিও ওই আগ্রাসী নীতি দুটির জালে বন্দি হয়ে পড়েছিল। মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান অধীনতামূলক নীতির বিরোধিতা করে কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।


অষ্টাদশ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশের রাজশক্তিগুলি প্রত্যেকেই নিজের শাসন এলাকা ও সম্পদ বৃদ্ধির জন্য অনবরত নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ত। ব্রিটিশ শক্তিকে সমস্ত দেশীয় রাজাই একটি নতুন শক্তি মনে করে নিজেদের দলে টেনে নেবার

চেষ্টা করত। ব্রিটিশ কোম্পানি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থ ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের কাজ জোরকদমে চালাতে লাগল।


লর্ড ওয়েলেসলি ভারতের আঞ্চলিক শক্তিগুলির ভয়ংকর বিবাদকে ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে বিপদ বিবেচনা করে সরাসরি অথবা যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের অনেককেই অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণে বাধ্য করেন।


অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি অগ্রাহ্য করে মহীশূরের শাসক হায়দর আলি ও তাঁর ছেলে টিপু সুলতান ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চারবার ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ নামে ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছে। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতান তাঁর রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তম রক্ষা করতে গিয়ে যুদ্ধে মারা যান। কোম্পানি তখন অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে মহীশূরের সমস্ত রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কেড়ে নিয়ে ওই রাজ্যের অনেক অঞ্চলে সরাসরি কোম্পানির শাসন চালু করে। হায়দরাবাদকে মহীশূরের খানিকটা অংশ ছেড়ে দিয়ে মহীশূরে কোম্পানির সেনাবাহিনী মোতায়েন করে।



+ ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ ঃ 

প্রায় ২০ বছর ধরে ভারতে উপনিবেশ কায়েম ও বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসিদের মধ্যে মাঝে মাঝেই সংঘাত সৃষ্টি হয়। ইউরোপীয়রা করমণ্ডল উপকূল ও তার পশ্চাদভূমিকে কর্ণাটক নাম দিয়েছিল। ১৭৪৪ থেকে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ অবধি এই কর্ণাটকেই ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের তিনবার ঘোর যুদ্ধ হয়েছিল। একেই বলা হয় ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ। ভারতে ফরাসিদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। চন্দননগর ও পণ্ডিচেরি। এই সময় পণ্ডিচেরির ফরাসি গভর্নর জেনারেল ছিলেন দুখে। তিনি স্থানীয় রাজা, নবার ও অঞ্চলের প্রধানদের সেনাবাহিনী ও সম্পদ ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসে অর্থাৎ তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধে ফরাসিরা চূড়ান্ত পরাজিত হলে ভারতে ব্রিটিশ ক্ষমতা বিস্তারের পক্ষে তার সমস্ত ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।


দাক্ষিণাত্যে তখন ছিল মারাঠা জোটের আধিপত্য। একসময় পেশোয়া পদের অধিকার নিয়ে পেশোয়া নারায়ণ রাওকে রঘুনাথ রাও হত্যা করেন। তখন মারাঠা সর্দাররা একজোট হয়ে রঘুনাথ রাওকে আক্রমণ করলে রঘুনাথ রাও মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের ব্রিটিশ বাহিনীর সাহায্য প্রার্থনা করে। ফলে মারাঠা জোটের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ কোম্পানির সংঘাত তৈরি হলে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সুচতুর ব্রিটিশ কোম্পানি সলবাই চুক্তি করে মারাঠাদের কোম্পানি বিরোধী শক্তিশালী জোট চূর্ণ করে দেয়।


এরপরেও মারাঠা সর্দারদের মধ্যে পেশোয়া পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব বেড়ে উঠলে লর্ড ওয়েলেসলি মারাঠাদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংঘাতের সুযোগ নেন। বাধ্য হয়ে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বেসিনের চুক্তিতে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নেন। পেশোয়া দরবারে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট বসানো হলেও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ধীরে ধীরে ইংরেজ বিরোধী মারাঠাদের নিয়ে ১৮১৭-১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির বিরুদ্ধে

যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ নামে ইতিহাস খ্যাত এই যুদ্ধে মারাঠারা বিধ্বস্ত হয়ে গেলে কোম্পানি পেশোয়া পদ মুছে দিয়ে সমস্ত এলাকা দখল করে নেয়। বিভিন্ন মারাঠা শক্তি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি মেনে নিলে দাক্ষিণাত্যে ও দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচ্ছত্র অধিকার লাভ করে।


উত্তর ভারতে অযোধ্যার উত্তরাধিকার নিয়ে গণ্ডগোল বাধলে ব্রিটিশ কোম্পানি অযোধ্যা প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেয়। উত্তর ভারতে পাঞ্জাবে শিখদের মধ্যেও উত্তরাধিকার নিয়ে ভয়ংকর গণ্ডগোল লেগে গেলে ‘অশান্ত' পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার নামে ব্রিটিশ কোম্পানি পঞ্জাবের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে। ফলে ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ শুরু হয় এবং শিখবাহিনী পর্যুদস্ত হয়। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে লাহোর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ কোম্পানি জলন্ধর দোয়াবে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে শিখ দরবারে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট নিয়োগ করে।


১৮৪৮-৫৬ খ্রিস্টাব্দব্যাপী লর্ড ডালহৌসি এদেশে কর্তৃত্ব করেছেন। তাঁরই প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতির মাধ্যমে কোম্পানি অসংখ্য রাজ্য গ্রাস করে নেয়। সাতারা, সম্বলপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চলে উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনো পুরুষ শাসক না থাকার অজুহাতে ডালহৌসি এই নীতিতে ওই অঞ্চলগুলি দখল করে নেন। কোম্পানির সেনাবাহিনীর খরচ জোগানোর জন্য ডালহৌসি ইতিমধ্যেই হায়দরাবাদের বেরার প্রদেশ দখল করে নিয়েছিলেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যার বাকি অঞ্চলগুলিতেও অপশাসনের অজুহাতে তিনি তা দখল করে নেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ডালহৌসি দ্বিতীয় ইঙ্গ- শিখ যুদ্ধে শিখবাহিনীকে বিধ্বস্ত করে ভারতীয় উপমহাদেশের ষাট ভাগেরও বেশি অংশে ইংরেজ প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।



About the Author

Hello Friends, welcome to our website Daily GK Career , founded on 27 April 2023 by Sandip Sanki. Daily GK Career is a free professional Education platform where we provide Free online mock test, govt exam, WBCS, RAIL, GROUP D, BANK, POST Office, …

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.