ভারতীয় সংবিধান : গণতন্ত্রের কাঠামো ও জনগণের অধিকার
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস
নবম অধ্যায়
( History class 8 lesson 9 )
অনেক ক্ষয়ক্ষতি, দেশভাগের যন্ত্রণা, অসংখ্য সমস্যা ইত্যাদি মাথায় নিয়ে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হল ভারতবর্ষ। এরপর দীর্ঘ তর্কবিতর্ক ও আলাপ-আলোচনার শেষে তৈরি হল স্বাধীন ভারতের সংবিধান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত সংবিধানটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতে কার্যকর করা হল। কতকগুলি আইনের সমষ্টি নিয়ে যেমন কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় তেমনি সুবৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্র তার আইনের সমষ্টি নিয়ে তৈরি করে সংবিধান। যে-কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হল তার সংবিধান।
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ভারতীয়দের চাওয়া পাওয়া নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্রমাগত দাবি তুললে বিভিন্ন সময়ে শাসনতান্ত্রিক কিছু সংস্কার করলেও প্রশাসনের মূল নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল নিজেদের হাতেই। কিন্তু সুদীর্ঘ বছরব্যাপী বিভিন্ন রকমভাবে আন্দোলনের চাপে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার একটি সংবিধান সভা গঠনের প্রস্তাব নিয়ে জুলাই মাসে গণপরিষদ গঠন করে।
টুকরো খবর
* সাধারণতন্ত্র দিবস ও ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ভারতকে সাধারণতন্ত্র ঘোষণা করে সেই অবধি এই দিনটি সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধানগুলির শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলি গ্রহণ করে ভারতীয় সংবিধানকে বিশ্বের সবথেকে বাড়া সংবিধানরূপে রচনা করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের আত্মা বলা হয় তার প্রস্তাবনাকে। সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ভারত একটি 'সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র' বলা হয়েছিল। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীতে ভারতকে বলা হয়েছে 'সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র'। 'সার্বভৌম' বলতে বোঝায় ভারতরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম ক্ষমতার অধিকারী। 'সমাজতন্ত্র' বলতে প্রত্যেক নাগরিক তার নিজের বিশ্বাস মতো ধর্মাচরণ করতে পারবে। 'গণতন্ত্র' বলতে ভারতীয় সংবিধানে মূলত প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার বোঝানো হয়েছে। 'সাধারণতন্ত্র' বলতে বোঝায় ভারতীয় শাসনতন্ত্রের উৎস ও রক্ষক হল ভারতীয় জনগণ।
• কেন্দ্রীয় শাসনবিভাগ :
ভারতীয় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদই রাষ্ট্রপতির নামে
শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান।
* রাষ্ট্রপতি ঃ
সমগ্র রাষ্ট্র বা জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি। লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ৩৫ বছর বয়স্ক ভারতীয় নাগরিককে বোঝায়। তাঁর কার্যকাল পাঁচ বছর।
+ উপরাষ্ট্রপতি :
রাষ্ট্রপতির পরেই উপরাষ্ট্রপতির স্থান। সাধারণত পাঁচ বছর কার্যকালের জন্য রাজ্যসভায় সদস্য হওয়ার যোগ্য ৩৫ বছর বয়স্ক যে-কোনো নাগরিক উপরাষ্ট্রপতি হতে পারেন।
+ কেন্দ্রীয় আইনসভা ঃঃ
রাষ্ট্রপতি ও দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদ গঠিত। কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা। অনধিক ২৫০ জন সদস্য নিয়ে রাজ্যসভা গঠিত হয়। ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের নাম লোকসভা। সংবিধানে বর্তমান লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৫২ করা হয়েছে। লোকসভার সদস্যরা সাধারণত পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। লোকসভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ বা স্পিকার।
* প্রধানমন্ত্রী :
রাষ্ট্রপতি দেশের সাংবিধানিক প্রধান হলেও, প্রধানমন্ত্রীই রাষ্ট্রের প্রকৃত পরিচালক। লোকসভা নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মতো অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মাধ্যম।
+ রাজ্যের আইনসভা :
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে আইনসভা রয়েছে। রাজ্যপাল, বিধানসভা এবং বিধানপরিষদ অথবা রাজ্যপাল ও বিধানসভা নিয়ে গঠিত হয় রাজ্য আইনসভা।
* রাজ্যপাল :
রাজ্যের শাসনব্যবস্থার প্রধান হলেন রাজ্যপাল। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশে রাষ্ট্রপতির দ্বারা পাঁচ বছরের জন্য নিযুক্ত হন। রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে তিনি অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন।
+ বিধানসভা
বিধানসভার প্রায় সব সদস্য বা বিধায়কাণ প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের
ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। বিধানসভার সদস্যদের মেয়াদ সাধারণত পাঁচবছর।
* মুখ্যমন্ত্রী ঃঃ
ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির সংসদীয় সরকারের প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল।
• আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন
সাধারণ জনগণ তাদের স্থানীয় অঞ্চলের অর্থাৎ নিজেদের গ্রাম ও শহরের শাসন-প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরাসরি অংশ নিয়ে যে শাসন পরিচালনা করেন তাকে বলে স্বায়ত্তশাসন। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা ত্রিস্তর পায়েত ব্যবস্থা নামে পরিচিত। এই তিনটি স্তরের নাম গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদ।
+ গ্রাম পঞ্চায়েত
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বনিম্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের সদস্যরা সার্বিক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে পণ্যায়েত প্রধান ও আর একজনকে উপপ্রধান নির্বাচন করেন। পঞ্চায়েত আইন অনুসারে প্রতিমাসে অন্তত একবার পশ্চায়েতের সভা ডাকা বাধ্যতামূলক। গ্রামপণ্য ায়েতের সভায় সাধারণত সভাপতিত্ব করেন গ্রামপ্রধান।
+ পঞ্চায়েত সমিতি :
কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হয়। একটি ব্লক। ওই ব্লক উন্নয়নের 2 সার্বিক দায়িত্ব পালন করে পঞ্চায়েত সমিতি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চায়েত ব্যবস্থার দ্বিতীয় স্তর হল পঞ্চায়েত সমিতি। পঞ্চায়েত সমিতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। পঞ্চায়েত আইনে তিন মাস অন্তর সমিতির সভা ডাকা বাধ্যতামূলক।
+ জেলাপরিষদ :
কলকাতা ও দার্জিলিং বাদে পশ্চিমবঙ্গের বাকি ১৭টি জেলায় আছে জেলাপরিষদ। জেলাপরিষদের কার্যকাল পাঁচ বছর। জেলাপরিষদের অধিবেশন প্রতি তিন মাস অন্তর আহ্বান করা বাধ্যতামূলক।
* পৌরসভা :
পৌরসভা হল পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ। পৌরসভার সদস্যদের বলে কাউন্সিলর। পৌরসভার কাউন্সিলরদের কাজের মেয়াদ পাঁচ বছর। কাউন্সিলররা একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইসচেয়ারম্যান নির্বাচন করেন।
নিজে করো
তোমার স্থানীয় অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা বিষয়ে একটি চার্ট বানাও। পাশাপাশি
স্থানীয় অनে সমীক্ষা করে। যে কীভাবে এই অঞ্চলের আরও উন্নতি করা যেতে
পারে বলে অঞ্চলের বাসিন্দারা মনে করছেন।
উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা গ্রামীণ ও পৌর দুটি ভাগে বিভক্ত। গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনব্যবস্থা প্যায়েত ব্যবস্থা নামে পরিচিত। পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় তিনটি স্তর আছে। সব থেকে নীচের স্তরে রয়েছে গ্রামপঞ্চায়েত। তার ওপরে রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি। তারও ওপরে রয়েছে জেলা পরিষদ।
আমি প্রায় মাসখানেক বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমাদের অঞ্চলের একটি সমীক্ষা করেছি। (১) আমাদের গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সরকারি একটি খাল। এখানকার লোকজন সেই বলটিকে বলে ডোঙাডিঙা খাল। গ্রীষ্মকালে চাষের সুবিধা সরকারি ব্যবস্থায় এই খালের মাধ্যমে ভাল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এখানকার অধিবাসীদের অভিযোগ ইদানীংকালে চাদের ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় যথেষ্ট জন সরবরাহ হচ্ছে না।
(২) আমাদের গ্রামের লোকসংখ্যা এখন প্রায় চার হাজার। সেই অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারে উপযুক্ত শৌচাগার নেই। পাশের চকশূল পান গ্রামটিতেও অনেক মানুষের এই ব্যাপারে কিছু অভিযোগ শোনা গেল।
(৩) আমাদের পার্শ্ববর্তী অন্য একটি গ্রামের নাম ব্রাহ্মণশাসন। সেই গ্রামটি ছোটো হওয়ায় এখনও পর্যন্ত একটি প্রাথমিক স্কুলের ব্যবস্থা করা হয়নি। সেখানে একটি স্কুল প্রয়োজন।
(৪) হাফিমান গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ সেখানকার বহু পুরোনো একটি
নাভিদ আছে, সেটি সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ বহুদিন আগে থেকে
পঞ্চায়তে সমিতিকেও বলা সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
(৩) খানিক দুরের চকমাধুরী গ্রামে একটি হাইস্কুল আছে। প্রচুর ছাত্রছাত্রী। প্রচুর সুনাম। সেখানে সেই স্কুলেরই আরও একটি শাখা খোলা একান্ত প্রয়োজন।
* পশ্চিমবঙ্গে পৌরসভা : ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপনের উদ্যোগে গঠিত ভারতের
পৌর শাসনব্যবস্থা অনুসারে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বর্ণীয় পৌর আইন তৈরি হয়। সেই
আইনানুসারে পশ্চিমবঙ্গেও পরিচালিত হত পৌরসভাগুলি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে
পৌরশাসন ব্যবস্থাকে আরও গণতান্ত্রিক করা হয়।
• সামাজিক উন্নয়নে সংবিধানের ভূমিকা : ভারতের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও সমাজে মেয়েরা ভীষণভাবে অবহেলিত। তাই মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে, মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে, পুরুষের মতো মেয়েদেরকে সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে বেশ কিছু আইন বলবৎ হয়েছে। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানগতভাবে বলা হয়েছে যে, জমি ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নারীদেরও সমান অধিকার দিতে হবে।
টুকরো কথা
* পারিবারিক হিংসারোধ আইন ২০০৫। পরিবারের কোনো মেয়ে তার পরিবার কিংবা সমাজের কোনো ঘটনায় যাতে নিপীড়নের শিকার না হন তার জন্য পারিবারিক হিসোবোন আইন- ২০০৫। কোনো মেনে মানসিকভাবে তার কিং অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়নের শিকার হলে সে বিষয়ে এই আইনানুসারে মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের কাছে আবেদন জানাতে পারেন। এ ছাড়া প্রতিটি জেলার সুরক্ষা আধিকারিকদের (Protection Officer) কাছেও এ ব্যাপারে আবেদন করা যায়।
মনো রেখো, প্রতিটি শিশু, ছেলে বা মেয়ে যা হোক না কেন, সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মেয়ে শিশুরা নানা অত্যাচারের শিল্পার না। শিশুদের অধিকার রক্ষার কথাও সংবিধানে আছে।
অনগ্রসর নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সংবিধানের ভূমিকা ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয় জনসমাজের একটি বড়ো অংশ 'পশ্চাৎপদ শ্রেণি' বলে পরিচিত হত। তাঁদেরকে 'তপশিলি জাতি' 'হরিজন' ও 'দলিত' প্রভৃতি বলা হয়। স্বাধীনতা লাভের পরেও ওই মানুষদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশেষ উন্নতি হয়নি। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ড. বি. আর আম্বেদকরের বারবার দাবির ফলে দলিত মানুষদের তফশিলি জাতি হিসেবে আলাদা নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে আবার গান্ধি আমরণ অনশন করেন। পরে অবশ্য গান্ধি ও আম্বেদকরের মধ্যে পুনা চুক্তি অনুসারে দলিতদের আলাদা নির্বাচনের বদলে যৌথ নির্বাচনেই তফশিলি জাতির জন্য ১৫১টি আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এরপরেও অনেক ক্ষেত্রেই কংগ্রেসি অনেক নেতা জাতপাতের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইলেন না।
অবশেষে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পর সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. বি. আর আম্বেদকরের উদ্যোগেই স্বাধীন ভারতের সংবিধানে অস্পৃশ্যতাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি তফশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য নীতি তৈরি করা হয়। রাষ্ট্রপতির তরফে বিভিন্ন রাজ্যের তফশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিসহ ইচ্ছাভারতীয়দের জন্য একটি আইনমাফিক
তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে 'অনগ্রসর' জাতি ও উপজাতি বলতে কী বোঝায় তার স্পষ্ট একটি মাপকাঠি সরকারের তরফে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। যেমন- তাঁরা হিন্দু সমাজের বিধান অনুসারে নীচু স্তরের মানুষ, যাঁদের সমাজে শিক্ষার হার খুবই নগণ্য, যাদের মধ্যে সরকারি চাকুরি পাওয়ার সংখ্যা খুবই কম এবং যাঁদের মধ্যে শিল্পবাণিজ্যেরও প্রসার নেই বললেই চলে, তাঁদেরকেই বলা হয় অনগ্রসর শ্রেণি।
ভারতীয় সংবিধানে 'সংখ্যালঘু' বলতে সমাজে সংখ্যার ভিত্তিতেই সংখ্যালঘু বোঝানো হয়েছে। সংখ্যালঘু নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্র কিংবা সরকার কোনো সংখ্যালঘু সংস্কৃতির ওপর, ভাষার ওপর, সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃতি বা আঞ্চলিক সংস্কৃতি চাপিনে৷ নিতে পারে না। সংবিধান অনুসারে ভাষাগতভাবে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য প্রাথমিক স্তরে তাদের মাতৃভাষায় লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধানের উদ্দেশ্য হল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সমস্ত নাগরিককে সমান মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া।
• সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও কর্ডনাসমূহ ভারতীয় সংবিধানে নাগরিক এর ৬টি মৌলিক অধিকার হল- সামোর অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার, সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার।
মৌলিক এই অধিকারগুলির উল্লেখ ছাড়াও ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের ১০টি মৌলিক কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে আবার ৮৬তম সংবিধান সংশোধনে বলা হয়েছে যে, বাবা-মা অথবা অভিভাবক-অভিভাবিকার কর্তব্য হল – তাদের ছয় থেকে চোদ্দো বছর বয়স্ক সন্তান বা পোষ্যের শিক্ষার যথোচিত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন >>>
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়
অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়