বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ কাকে বলে? শক্তি প্রবাহের বিভিন্ন পর্যায় ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
(Energy flow in ecosystem, process and characteristics)
বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ কাকে বলে |
শক্তিপ্রবাহের সংজ্ঞা :
উৎপাদক দ্বারা খাদ্যে আবদ্ধ রূপান্তরিত সৌরশক্তির এক পুষ্টিস্তর থেকে অন্য পুষ্টিস্তরে স্থানাস্তরণকে শক্তিপ্রবাহ বা এনার্জি flow বলে।
বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের পর্যায় /পদ্ধতি
বাস্তুতন্ত্রে তিনটি পর্যায়ে শক্তির প্রবাহ ঘটে। যথা— (1) শক্তির অর্জন, (2) শক্তির ব্যবহার, (3) শক্তির স্থানান্তকরণ।
1. শক্তির অর্জন : ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রাথমিক বা মূল উৎস হল সূর্যালোক। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত প্রায় 12-3x10 কিলোক্যালরি সৌরশক্তির মধ্যে প্রায় 55-60% সৌরশক্তি আবহমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয় অথবা মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীতে আগত সৌরশক্তির মধ্যে 0.1% সৌরশক্তি সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে খাদ্যে আবদ্ধ হয়।
সালোকসংশ্লেষের ফলে উৎপন্ন শর্করা জাতীয় খাদ্যে যে পরিমাণ শক্তি আবদ্ধ হয়, তাকে মোট উৎপাদন বা সামগ্রিক উৎপাদন বলে। উৎপাদকের দেহে মোট উৎপাদিত শক্তির কিছু অংশ শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপশক্তিরূপে মুক্ত হয়। শ্বসন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হওয়ার পর মোট উৎপাদিত শক্তির অবশিষ্ট অংশকে শক্তির আসল বা প্রকৃত উৎপাদন বলে।
* (b) শক্তির ব্যবহার : উৎপাদকের দেহে আবদ্ধ রূপান্তরিত সৌরশক্তির আসল বা প্রকৃত উৎপাদন প্রথম শ্রেণির খাদকরা গ্রহণ করে, একইভাবে প্রথমশ্রেণির খাদকের দেহের প্রকৃত উৎপাদিত শক্তি দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক এবং দ্বিতীয় শ্রেণির খাদবের দেহের প্রকৃত উৎপাদিত শক্তি তৃতীয় শ্রেণির খাদক গ্রহণ করে। এইভাবেই রূপান্তরিত সৌরশক্তি বিভিন্ন পুষ্টিস্তরে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি পুষ্টিস্তরের বা শ্রেণির খাদকেরা যে পরিমাণ শক্তি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করে, তাকে অর্জিত শক্তি বলে। এই অর্জিত শক্তির যে অংশ বিভিন্ন জৈবনিক কার্যের জন্য শ্বসনের মাধ্যমে তাপশক্তিতে পরিণত হয়, তাকে শ্বসন শক্তি বলে।
*C. শক্তির স্থানান্তকরণ : বাস্তুতন্ত্রে বা ইকোসিস্টেমে শক্তির মূল উৎস সৌরশক্তি উৎপাদকের দেহে স্থৈতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আবদ্ধ হয়। উৎপাদকের দেহ থেকে এই শক্তি বিভিন্ন পুষ্টিস্তরে ক্রমপর্যায়ে অর্থাৎ উৎপাদক থেকে প্রথম শ্রেণির খাদক, প্রথম শ্রেণির খাদক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক এবং দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক থেকে তৃতীয় শ্রেণির খাদকে স্থানান্তরিত হয়। একটি পুষ্টিস্তর বা শ্রেণি থেকে অন্য পুষ্টিস্তর বা শ্রেণিতে স্থানান্তরণের সময় শক্তির কিছু অংশ তাপশক্তিতে পরিণত হয়ে প্রকৃতিতে মিশে যায় এবং এই শক্তি পুনরায় জীবদেহে ফিরে আসে না, অর্থাৎ বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ একমুখী। বিজ্ঞানী রেমন্ড লিন্ডেম্যানের মতে একটি পুষ্টিস্তর থেকে পরবর্তী পুষ্টিস্তরে স্থানান্তরিত শক্তির 10% অংশ দেহগঠনে ব্যবহৃত হয় এবং 90% অংশ বিভিন্ন জৈবনিক কাজের জন্য তাপশক্তি রূপে ব্যয়িত হয়। অর্থাৎ এই সূত্রানুসারে, একটি ছাগল যদি 100 Kg উৎপাদকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে, তাহলে 10 Kg ছাগলটির দেহগঠনে লাগবে। একটি বাঘ যদি ছাগলের 10 Kg মাংস খায়, তাহলে 1 Kg দেহগঠানে লাগবে।
শক্তি প্রবাহের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য
প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে— শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। শুধুমাত্র শক্তির রূপান্তর ঘটে।
দ্বিতীয় সূত্রে বলা হয়েছে— একশক্তি থেকে অন্য শক্তিতে রূপান্তরের সময়, রূপান্তরিত হওয়ার জন্য কিছু পরিমাণ শক্তির অপচয় ঘটে।
উপসংহার
FAQ (Frequently asked questions)
বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ বলতে কী বোঝো?
উৎপাদক থেকে বিভিন্ন শাড়ির খাদকের মধ্য দিয়ে খাদ্যশক্তির চলকে বাস্তু তন্ত্রের শক্তি প্রবাহ বলে।
ইকোলজি কাকে বলে?
বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে পঠন পাঠনকে ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা বলে।
লাইকেন কি?
লাইকেন হলো শৈবাল ও ছত্রাকের একসঙ্গে বসবাস।
চিল্কা হ্রদ কোথায় অবস্থিত?
উড়িষ্যা।