সুয়েসের মহাদেশীয় সঞ্চরণের ধারণা
Daily GK Career : তোমাদের প্রত্যেককে ডেইলি জিকে কেরিয়ার ( Daily GK Career) এ স্বাগত জানাই। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের যেকোনো ধরনের পরীক্ষার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে জেনারেল নলেজ এই ওয়েবসাইটে শেয়ার করে থাকি।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে ১৫ টি কিংবা তারও অধিক কুইজ কোশ্চেন শেয়ার করা হয়। Quiz অংশগ্রহণ করতে তোমরা আমাদের উপরে দেওয়া টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন হতে পারো।
সুয়েসের মহাদেশীয় সঞ্চরণের ধারণা
(Concept of drifting continents by Suess)
Table of Contents
এডওয়ার্ড সুয়েস তাঁর 'দ্য ফেস্ অফ দি আর্থ' (The face of the Earth) বইতে উল্লেখ করেন, এশিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ প্রান্তে যে-বৃত্তচাপের মতো পর্বতমালা রয়েছে তা অনুভূমিক চাপ ও সংশ্লিষ্ট অল্প কোণবিশিষ্ট গ্রাস্টযুক্ত ভাঁজ সৃষ্টির ফল। তাঁর ধারণা অনুযায়ী মহাসাগরীয় অংশের অবনমনের ফলে কতগুলি অনুভূমিক ভাঁজ সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও সংশ্লিষ্ট সংকোচনই এর কারণ।
অ্যালফ্রেড হেগেনার যখন আবহাওয়াবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করছেন সেই সময়েই এডুয়ার্ড সুয়েসের 'দ্য ফেস অফ দ্য আর্থ' (Das Antlitz der Erde) বই প্রকাশিত হয়। এই বইতে সুয়েস উল্লেখ করেন যে পৃথিবীর কঠিনীভবন ও সংকোচনের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি এবং অপেক্ষাকৃত হালকা আগ্নেয় শিলা ও রূপান্তরিত শিলা ক্রমশ ভূপৃষ্ঠের দিকে উঠে আসছে। এই শিলা গ্রানাইট জাতীয় এবং এগুলি মূলত অ্যালুমিনা সিলিকেট।
Related Posts
ভূত্বকের ওপর দিকের এই পদার্থকে তিনি সাল (Sal) বলে অভিহিত করেন, যা পরবর্তীকালে সিয়াল (Sial) নামে পরিচিত হয়। সুয়েসের ধারণা অনুযায়ী এই অপেক্ষাকৃত হালকা শিলাস্তরের নীচে রয়েছে বেশি ঘনত্বযুক্ত সিমা (Sima) যা মূলত লোহা, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের সিলিকেট।
ওপরের স্তরের শিলা গ্রানাইট জাতীয় এবং নীচের স্তর ব্যাসল্ট, গ্যাব্রো ও পেরিডোটাইটে তৈরি।
সুয়েস ইউরেশিয়ার মহাদেশীয় ভূখণ্ডের দক্ষিণ এবং পূর্বপ্রান্তের পার্বত্য অঞ্চলে বড়ো আকারের 'ওভার ফোল্ডিং' এবং 'খ্রাস্ট' লক্ষ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে অনুভূমিকভাবে ক্রিয়াশীল চাপের ফলে এইসব ভাঁজ তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে ভূত্বকীয় অংশ ঠান্ডা ও সংকুচিত হওয়ার ফলে মহাদেশীয় ভূখণ্ড মহাসমুদ্রের দিকে যেতে থাকে। এই অনুভূমিক চাপই ভাঁজযুক্ত পর্বতমালা তৈরি করে। শুকনো এবং সংকুচিত আপেলের ভাঁজের সঙ্গে তিনি পর্বতমালার তুলনা করেন।
তাঁর মতে, ভূত্বকে চ্যুতির সৃষ্টি ও অবনমন থেকে মহাসাগর সৃষ্টি হয়, এবং মহাদেশগুলি 'হোস্ট' বা উত্থিত অংশ হিসেবে উঁচু হয়ে ওঠে। বিভিন্ন প্রাণীর এবং প্রাণীর জীবাশ্মের অস্তিত্বের ভিত্তিতে তিনি একটি প্রাচীন মহাদেশের কথা বলেন। বর্তমান পৃথিবীর মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, মাদাগাস্কার এবং ভারতীয় উপদ্বীপ ছিল এই মহাদেশের বিভিন্ন অংশ।
এইসব মহাদেশীয় অংশে প্যালিওজোয়িক যুগের গন্ডোয়ানা প্রাণী-জীবাশ্মের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল বলে সুয়েস এই প্রাচীন মহাদেশের নাম দেন গন্ডোয়ানাল্যান্ড। প্রকৃতপক্ষে, ভারতের একটি অংশের নাম ছিল গন্ডোয়ানা। পরে অবশ্য গন্ডোয়ানাল্যান্ড বলতে সুয়েসের নির্বাচিত ভূখণ্ডগুলি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ধরা হয়।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ভূত্বকীয় পদার্থের প্রকৃতি নির্ণয়, মহাদেশীয় সঞ্চরণ ছাড়াও এডুয়ার্ড সুয়েস পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রতলের ওঠানামার বিষয় নিয়েও চিন্তা করেন। সুয়েসই সমুদ্রতলের এই ওঠানামাকে 'ইউস্ট্যাটিক' (Eustatic) নামে অভিহিত করেন।